নড়াইলের কামারপাড়া এলাকায় পা রাখতেই যেন কানে ভেসে আসছে হাতুড়িপেটা আর লোহার টুংটাং শব্দ। কাছে যেতেই চোখে পড়ে ছোট গর্তে কয়লার তীক্ষ্ণ আগুনের ফুলকি। তাতে লোহা পুড়ে গনগনে লাল হয়ে উঠছে। সেই লোহার ওপর চলছে অনবরত হাতুড়ির আঘাত।
পবিত্র ঈদুল আজাহাতে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার সরঞ্জাম তৈরিতে এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। তৈরির পাশাপাশি শান দিচ্ছেন চাপাতি, দা, বটি, ছুরিসহ নানা রকম ধারালো সরঞ্জামে।
সরেজমিনে নড়াইল জেলার ভওয়াখালি, লোহাগড়া জামরুল তলা, মাইকপট্টি, এড়েন্দা বাজার, কলাগাছি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গনগনে আগুন থেকে গরম লোহার পাত পিটিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পশু জবাই করার নানা সরঞ্জাম। এ কাজে কেউ কয়লার আগুনে বাতাস দিচ্ছেন, কেউ আবার লোহা পেটাচ্ছেন। দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ক্রেতারা। কেউ দা কিনছেন, কেউ ছুরি, কেউবা আবার চাপাতি কিনছেন।
কামারপাড়ায় প্রকারভেদে বিভিন্ন দামে এসব সরঞ্জাম বিক্রি করা হচ্ছে। বড় ছুরির দাম ১ হাজার থেকে ২ হাজার হাজার টাকা, ছোট ছুরির ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। অন্যদিকে চাপাতি বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে। প্রতি কেজি চাপাতি ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বটি প্রতি পিস ৩৫০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
নড়াইলের ভওয়াখালীর কামারপাড়ার প্রীতিস কর্মকার বলেন, সারাবছর তেমন কাজের চাপ না থাকলেও বছরে কোরবানি ঈদে কাজের ব্যস্ততা দু’গুণ বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে লোহা ও কয়লার দাম বেশি হওয়ায় লাভ খুব কম হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বিদ্যুৎ কর্মকার বলেন, কোরবানির ঈদের কাজ শুরু হয়েছে। কয়লা, লোহা ও শ্রমিকের দাম বাড়লেও চাপাতি, বঁটি, ছুরির দাম না বাড়ায় এই ব্যবসায় এখন আর লাভ হয় না। আগের দামেই এখনও ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি। তবে ঈদে কাজের ব্যস্ততা বেড়েছে বলে জানান।
ফখরুল আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, কোরবানির গরুর মাংস কাটার জন্য নতুন চাপাতি তৈরি করতে দিয়েছিলাম সেটা নিতে এসেছি। তৈরি করা তেমন ভালো চাপাতি পায়নি। তাই এক কেজি ওজনের ইস্পাত কিনে নতুন চাপাতি বানাতে দিয়েছিলাম। এ বছর চাপাতির দাম অনেক বেশি মনে হচ্ছে।
কায়েম হোসেন বলেন, অন্য সময় সাধারণত কসাইয়ের দোকান থেকে আমরা মাংস নেই। সে ক্ষেত্রে আমাদের ছুরি, চাপাতি ইত্যাদির প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কোরবানির ঈদে নিজেরাই পশু জবাই ও মাংস প্রস্তুত করি। যার কারণে এগুলোর প্রয়োজন হয়। ঈদ উপলক্ষে কামারের দোকানে বেশ ভিড় রয়েছে। শান দেওয়ার দামও তুলনামূলক বেশি।
চাপাতি ও চাকু কিনতে আসা আব্দুল খালেক নামে এক ব্যক্তি বলেন, রাধানগর থেকে এখানে আসছি চাপাতি ও চাকু কিনতে। ৭০০ টাকা দিয়ে চাপাতি কিনেছি। আগে দাম কম ছিল, এখন বাড়তি। আগে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে কিনতাম। কিন্তু এখন ৭০০ টাকা দিয়ে কিনতে হলো।
বটি কিনতে আসা টিটুল বলেন, খাঁসির মাংস কাটার জন্য নতুন বটি কিনতে এসেছি। ৩৮০ টাকায় একটি বটি নিলাম।
নয়াশতাব্দী/এনএইচ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ