ঢাকা, শনিবার, ৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীসহ গ্রাহক

প্রকাশনার সময়: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৩৫

মনপুরা বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত লক্ষাধিক মানুষ। তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ ,স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী,ব্যবসায়ী, গ্রাহক, হাসপাতালের রোগীসহ সাধারণ মানুষ। সরকার শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার ঘোষণা করলেও মনপুরা এখনও ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের আওতায় আসেনি। কেবল উপজেলার আশপাশের এলাকায় দৈনিক ২ ঘণ্টা বিদ্যুত পেয়ে থাকে তাও রাতের বেলায় রুটিনমাফিক। বিদ্যুতের ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ।

বঙ্গবন্ধুর চিন্তনিবাস খ্যাত মনপুরায় জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ দিয়ে আলোকিত করার জন্য দাবি করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। ২৪ ঘণ্টায় জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন নাগরিক কমিটিসহ সকল শ্রেণির হাজারো মানুষ। সাধারণ মানুষের একটাই দাবি জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ। সৌরবিদ্যুতের আলো মিটমিট করে জ্বলে। এটা কোনো শক্তিশালী বিদ্যুৎ নয়। সাধারণ বিদ্যুৎ খরচের চেয়ে এই বিদ্যুতের খরচ অনেক বেশি।

ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপের একমাত্র উপজেলা মনপুরা যেখানে এখনও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পায় তাও রুটিন মাফিক। মুজিববর্ষে ন্যায্যমূল্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পোঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। দ্রুত মনপুরায় জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ দিয়ে আলোকিত করার দাবি জানিয়েছেন এখানকার সচেতন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন রাতের বেলায় দৈনিক ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়ে আসছে। গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় ১ হাজার কেভিএ (১ মেঘাওয়াট) উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন মেশিনটি ভাষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। বিকল্প হিসেবে ৬৫০ কেভিএ ১টি ও ৫০০ কেভিএ ২টি পুরাতন মেশিন চালু করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করলেও তা গ্রাহকের চাহিদা মোটেও পূরণ করতে পারছে না।

৬ ঘণ্টার বিপরীতে উপজেলার আশপাশের এলাকায় ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বিদ্যুৎ বিভাগ। ৩টি পুরাতন মেশিনের মধ্যে ১টি মেশিন চালু করে কোনো মতে উপজেলার প্রধান বাজার হাজিরহাট ও উপজেলার আশপাশ এলাকায় দৈনিক ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। যার ফলে পুরা এলাকা এখন অন্ধকার। বিদ্যুতের এহেন ভেলকিবাজিতে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। গত ৭ এপ্রিল কালবৈশাখী ঝড়েরর পর থেকে পুরো অন্ধকারে মনপুরা। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সকল ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। ব্যবসায়ী ও গ্রাহকদের দোকানের ফ্রিজ, টিভিসহ লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বিদ্যুৎ না থাকায় তারা রাতের বেলায় পড়ালেখা করতে বেশ অসুবিধা পড়তে দেখা গেছে। সরকারি কার্যক্রম চালাতেও বেশ হিমশিম খেতে হয়েছে। উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে সোলার মিনি গ্রিডের বিদ্যুৎ রয়েছে। সোলার মিনি গ্রিডের উৎপাদিত বিদ্যুৎ তাও গ্রাহকরা ঠিকমত পাচ্ছে না। সকলের একটাই দাবি জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মনপুরা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী তাসনিয়া নিশাত কপি (বাতির ) আলোতে খুব কষ্ট করে পড়া-লেখা করছে। হাজির হাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র মো. সাঈদ আবদুল্লাহ নিহাল হারিকেনের আলোতে পড়ালেখা করতে দেখা গেছে। এই চিত্র এখন উপজেলার প্রায় সব বাড়িতে। ব্যবসায়ীরা সোলার বাতির আলোতে বেচাকেনা করতে দেখা যাচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় সবাই কষ্ট করে দিন পার করছেন। তীব্র গরমে বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভুগান্তিতে সাধারণ মানুষ। বিদ্যুৎ গ্রাহক নজরুল, মো. বেলাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমরা বিদ্যুত পাই না। অথচ প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়। কবে বিদ্যুৎ পাবো তাও জানি না।

হাজিরহাট বাজার ব্যবসায়ী মো. মিজান অভিযোগ করে বলেন, আমরা মাত্র রাতের ১০টার সময় ১ ঘণ্টার জন্য বিদ্যুৎ পাই। বিদ্যুতের অভাবে আমাদের দোকানের ফ্রিজ নষ্ট হয়ে গেছে। বাজারের সকল ব্যবসায়ীদের একই অবস্থা।কবে বিদ্যুৎ পাবো তা বলতে পারে না বিদ্যুৎ অফিস।

হাজির হাট মডেল সরকারি মধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যুতের অভাবে আমাদের দৈনন্দিন কাজ-কর্ম করতে সমস্যা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বিদ্যুতের কারণে ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছে না। আমরা তাড়াতাড়ি বিদ্যুতের এই অবস্থার পরিবর্তন চাই। জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ চাই।

এব্যাপারে আবাসিক প্রকৌশলী মো. ফরিদ বলেন, আমাদের ৩টি মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। ১টি মেশিন দিয়ে আমরা পারটাইম এলাকা ভিত্তিক বিদ্যুত দিয়ে যাচ্ছি। আমরা মেশিন মেরামতের কাজ করছি। নতুন একটি মেশিন শিগগিরই আসবে। মেশিন আসলে আমরা আবার আগের মতো বিদ্যুৎ দিতে পারবো। গ্রাহকদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। এ বিষয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত আছেন।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জহিরুল ইসলাম বলেন, একটি উপজেলার উন্নয়ন অনেকাংশে বিদ্যুতের উপর নির্ভর করে। বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের অফিসের কার্যক্রম চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে। চেষ্টা করে যাচ্ছি দ্রুত বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান করতে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ