ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

কখনও সাংবাদিক, কখনও র‌্যাব পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতেন মুন্না

প্রকাশনার সময়: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ২১:০০ | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:০৫

কক্সবাজারে এক দুর্ধর্ষ প্রতারকের আভির্ভাব ঘটেছে। কখনও সাংবাদিক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, জমি-ফ্লাট দখল, মাদক পাচার, র‍্যাবের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারণাসহ এমন কোনো দুঃসাহসী অপকর্ম নেই যা সে করেনি। এমনকি নিজেকে একজন কথিত সম্পাদকের বিশ্বস্ত তল্পিবাহক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে এই প্রতারক।

তিনি হলেন- কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়ার দক্ষিণ বড়বিল এলাকার আবদুস সালামের ছেলে মনছুর আলম মুন্না (৩০)। তিনি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব ঘোনার পাড়া সেলিম ড্রাইভারের বাড়িতে ভাড়া থেকে সাংবাদিকসহ র‌্যাব এবং বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদা আদায় ও মাদক ব্যবসা করে আসছিলেন।

এর আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকের নগ্ন ছবি ছড়িয়ে গ্রেপ্তার ও চাঁদাবাজি করতে গিয়ে কারাভোগও করেছে এই প্রতারক। আর এভাবে দিনে দিনে দুর্ধর্ষ হয়ে উঠছে সে। তার শিকারের থলিতে একের পর এক যুক্ত হচ্ছে ভুক্তভোগীর নাম। দীর্ঘ হচ্ছে আক্রান্তদের তালিকা।

স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ, সবার কাছে তিনি পরিচিত সাংবাদিক হিসেবে। সবাই যেন বিশ্বাস করে এজন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমের নিউজ কপি করে নিয়মিত ফেসবুকে পোস্ট দেন! কখনো গলায় কার্ড ঝুলিয়ে ছবি তুলেছেন সাংবাদিক প্রমাণে! আবার সাধারণ মানুষের কাছে তিনি পরিচিত ক্ষমতাবান হিসেবে! কেউ বা আবার চেনেন র‍্যাব পুলিশের সোর্স হিসেবেও! কিন্তু আসলে তিনি একজন মহাপ্রতারক। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেই তার এই বহুরূপী সাজ!

র‍্যাবের সোর্স পরিচয়ে ব্যবসায়ীকে ক্রসফায়ার ও মাদক মামলাসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ১ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগে বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকেলে কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১৫।

র‍্যাব জানায়, কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের পশ্চিম লারপাড়া এলাকার জনৈক নুরুল ইসলাম র‌্যাব-১৫ এর কাছে অভিযোগ দায়ের করেন, জমি-জমা সংক্রান্তে দীর্ঘদিন যাবত একই এলাকার সেলিমের সঙ্গে বিরোধের জেরে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় অভিযোগ ও কক্সবাজার কোর্টে মামলা হয়। এ বিষয়টি সম্পর্কে জনৈক মনছুর আলম মুন্না অবগত ছিলেন। এই সুযোগে তার সাথে কক্সবাজার র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সু-সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়ে চাঁদা দাবি করেন। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে জমি-জমা সংক্রান্তে দায়েরকৃত মামলায় র‌্যাবকে দিয়ে গ্রেপ্তারসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন।

অভিযোগকারী নুরুল ইসলাম একপর্যায়ে এক লাখ টাকা দিতে সম্মতি জ্ঞাপন এবং গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর নগদ ৪০ হাজার টাকা ও গত ৩১ জানুয়ারি ৬০ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে গত ১৬ মার্চ পুনরায় এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারেন ওই টাকা মনছুর আলম মুন্না নামে কোনো র‌্যাব সদস্য কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তিকে দেননি। বরং তাদের পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করে আসছেন।

এ অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকাল ৪টার দিকে র‌্যাব-১৫, সিপিএসসি ক্যাম্পের আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কক্সবাজার শহরের লালদিঘীর পাড় সোনালী ব্যাংকের পাশের গলি থেকে জনৈক র‌্যাব পরিচয় দেওয়া মনছুর আলম মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-১৫ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মনছুর আলম মুন্না স্বীকার করেন, তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেকে সাংবাদিকসহ র‌্যাব এবং বিভিন্ন সংস্থার সোর্স পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। এ সকল পরিচয় দিয়ে তিনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। তিনি ভিকটিমদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন ও হুমকি দিতেন এবং তার চাহিদা মোতাবেক চাঁদা প্রদানে বাধ্য করতেন।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রকিবুজ্জামান জানিয়েছেন, র‌্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেপ্তার হওয়া মনছুর আলম মুন্নাকে থানায় সোপর্দ করা হয়। তার বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হলে, আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ