ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

১৬ ঘণ্টায় লুট তিন ব্যাংক

প্রকাশনার সময়: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩০

বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে ছে। এ সময় তারা টাকা লুট করেছে। গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একদল সশস্ত্র হামলা ও লুটের ১৬ ঘণ্টার মাথায় দিনদুপুরে থানচি উপজেলার দুটি ব্যাংকে সশস্ত্র ব্যক্তিরা হামলা চালিয়েলোক দুটি গাড়িতে করে এসে পাশাপাশি থাকা কৃষি ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক শাখায় হামলা চালায় বলে কৃষি ব্যাংকের থানচি উপজেলার শাখার ব্যবস্থাপক হ্লা সুই থোয়াই জানান।

তিনি বলেন, ‘তারা এসে চোখের পলকে আমাদের ব্যাংকে ঢুকে সবাইকে জিম্মি করে ফেলল। তারপর সবাইকে একটি কক্ষে নিয়ে বাইরে থেকে আটকে দিল। ব্যাংকের টাকা লুট হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পরেননি কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক। তিনি বলেন, ‘তারা ব্যাংকে কী করেছে এখনো আমরা বুঝতে পারছি না। সব দেখে তারপর বলতে হবে।’ তবে একটি সূত্রমতে থানচির দুটি ব্যাংক থেকে ১৭ লাখ টাকা লুট হয়েছে। লুটকারীরা সবাই বিচ্ছিন্নবাদী সংগঠন কেএনএফ-এর সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াসি অভিযান চালানো হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে কোনো টাকা লুট হয়নি। ওই ব্যাংকের ভল্টে থাকা সব টাকা অক্ষত আছে। গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ এ কথা বলেন। তবে এ ব্যাংক থেকে ১৪ অস্ত্র লুট হয়েছে। অপহরণ করা হয়েছে ব্যাংটির শাখার ম্যানেজারকে। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

থানচির ঘটনা নিয়ে জানতে চাইলে বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আব্দুল করিম বলেন, ‘থানচিতে ব্যাংকে হামলা হয়েছে বলে আমরা খবর পেয়েছি। আমাদের ধারণা, গতকালের গ্রুপটিই এটা করেছে। গতকালের ঘটনার তদন্তে কোনো অগ্রগতি এখনো হয়নি।’

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, ‘গতকাল দুপুরে থানচি বাজারে এসে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে প্রবেশ করে টাকা লুট করে নিয়ে গেছে বলে জেনেছি। সোনালী ব্যাংক থেকে ১৪-১৫ লাখ টাকা নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। তবে কৃষি ব্যাংক থেকে কত টাকা নিয়েছে জানা যায়নি। সেখান থেকে কাউকে অপহরণ করার সংবাদও পাওয়া যায়নি।’ জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকের শাখায় একযোগে হামলা চালায়। এ সময় ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করা হয়। অপহরণ করা হয় এ শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে। পাহাড়ের সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বা বম পার্টি ওই ঘটনায় জড়িত বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। রুমার ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ভরদুপুরে থানচিতে দুটি ব্যাংকে হামলা ও টাকা লুটের ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় এক ব্যক্তির করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তবে ভিডিওটির সত্যতা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি।

ভিডিওতে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। এ সময় থানচি বাজারের লোকজন ভয় ও আতঙ্কে দৌড়াদৌড়ি শুরু করেন। দোকানপাট বন্ধ করতে দেখা গেছে। অনেক নারী-পুরুষকে একটি ঘরে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। আবার অনেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলেন। এ ঘটনার পর বাজার প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। রাস্তার পাশে ফুটপাতে কিছু দোকান খোলা অবস্থায় দেখা গেছে। অর্থাৎ গোলাগুলির সময় তারা দোকান খোলা রেখেই জান বাঁচাতে পালিয়ে যান।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্দ্বতনরা। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোনো অপরাধিকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

সরজমিনে থানচির সোনালী ব্যাংকের সামনে প্রচুর সাধারণ মানুষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা গেছে। তারা কীভাবে সমস্ত্র ব্যক্তিরা এসে হামলা করেছে এ নিয়ে কথা বলছিলেন। স্থানীয়রা বলছিলেন, ব্যাংকে যারা ডাকাতির জন্য প্রবেশ করেছিলেন তার বাইরেও তাদের আরও লোকজন সশস্ত্র অবস্থায় ছিলেন। তারা বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেন।

থানচি বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, “গতকাল ছিলো থানাচিতে সাপ্তাহিক বাজার। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে লোকজন মালামাল নিতে এখানে এসেছিলেন। বেলা সোয়া ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে তিনটি জিপে কয়েকশ লোক আসে। “আমরা তিনটি গাড়িতে করে লোকজন আসতে দেখেছি। তার মধ্যে দুটি গাড়ি থেকে নেমে তারা দুই ব্যাংকে যায়। একটি গাড়ি ব্যাংকের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল।”

বুধবার সাপ্তাহিক বাজার থাকায় দুই ব্যাংকেই অনেক গ্রাহক ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “সোনালী ব্যাংকে প্রবেশ করে দলটির সদস্যরা ম্যানাজারকে খুঁজতে থাকে। না পেয়ে ক্যাশ বাক্সে থাকা টাকা নিয়ে যেতে দেখা গেছে।”

সশস্ত্র দলটির সঙ্গে কয়েকজন নারীও ছিলেন জানিয়ে ওই ব্যবাসায়ী বলেন, “দলটির লোকজন খাকি পোশাক পরে ছিলেন। আমাদের ধারণা, তারা কুকি-চিন পার্টির সদস্য।” ব্যাংক লুট শেষে সশস্ত্র দলটি থানচি বাজারে প্রকাশ্যে ব্রাশ ফায়ার করে আতঙ্ক তৈরি করে এবং তিনটি জিপে চড়ে চাঁদাপাড়া এলাকার সড়কের দিকে চলে যায় বলে জানান ওই ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, সিনেমায় যেভাবে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ব্যাংক লুটের দৃশ্য দেখা যায় এ দৃশ্যটাও এমন মনে হয়েছে তার কাছে। স্থানীয় আরেকজন বলেন, “চাঁদাপাড়া এলাকায় নদীর পাড়ে কয়েকদিন ধরে নাটকের শ্যুটিং চলছিল। আমরা প্রথমে মনে করেছি সেই নাটকের কোনো শ্যুটিং চলছে। তাই অনেকে প্রথমে বিষয়টা এড়িয়ে গেছে। পরে বাজারে প্রকাশ্যে ব্রাশ ফায়ার যখন করল, তখন আমরা বুঝতে পেরেছি এটা ডাকাতি।”

রুমায় ‘অপহূত’ ব্যবস্থাপকের সন্ধান মেলেনি: বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকে সশস্ত্র হামলা ও লুটের ঘটনায় এখনও খোঁজ মেলেনি ‘অপহূত’ শাখা ব্যবস্থাপকের। ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনের ভাই ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলি থানার এসআই মিজান বলেন, “আমার ভাইয়ের এখনো কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমরা পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বিগ্ন অবস্থায় আছি। ” মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শতাধিক সশস্ত্র ব্যক্তি উপজেলা সদরে ব্যাংকটির শাখায় একযোগে হামলা চালায়।

এ সময় ব্যাংকের কর্মকর্তা, নিরাপত্তা রক্ষীসহ অন্তত ২০ জনকে মারধর করা হয়। অপহরণ করা হয় এ শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনকে। এ ঘটনায় পাহাড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার ও সোনালী ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গতকাল সকাল ৯টায় পৌঁছে রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকটির বিভিন্ন কক্ষ ঘুরে দেখেন এবং ব্যাংকের ভল্টটি পর্যবেক্ষণ করেন তারা ।

পর্যবেক্ষণ শেষে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে ভল্টের বিষয় আছে। কিছু প্রসিডিউয়াল বিষয় আছে। সিআইডির বিষয়ও থাকতে পারে। ক্রাইম সীন বিষয়গুলো পুলিশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ডিআরবি জব্দ করা আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পুলিশ, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে।”

ব্যাংক লুটের ঘটনায় কাদেরকে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, “যে সশস্ত্র গোষ্ঠীর কথা বলা হচ্ছে সেটা নানাভাবে, নানান ইঙ্গিতে যে কোনোভাবেই হোক বিষয়টা আসছে। কিন্তু তদন্ত ব্যতীত স্পষ্টভাবে বলা কঠিন বিষয়। তদন্ত সাপেক্ষে যদি সঠিক তথ্য পাই তখন অবহিত করা হবে “ এসময় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত ডিআইজি গোলাম মাহফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাংক লুটের সময় পুলিশ ও আনসারে অস্ত্র নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার সৈকত শাহীন বলেন, “মঙ্গলবার ৮টা ২০ মিনিটের দিকে ব্যাংকে হামলা হয়েছে। এই হামলার সময় পুলিশের যে গার্ডরা রয়েছে তাদের ১০টা অস্ত্র ছিল। আটটা চাইনিজ রাইফেল, দুইটা এসএমজি। তাদের ৩৮০ রাউন্ড গুলি লুট হয়েছে। এছাড়া আনসারের চারটি শর্টগান ও ৩৪ রাউন্ড গুলিও লুট করে নিয়ে গেছে।” “কে বা কারা করেছে এটা তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে এটা বলতে পারব, কে বা কারা এ ঘটনায় জড়িত। অলরেডি তদন্ত শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “ক্রাইম সিনের দল আসবে। তারা ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করবেন। সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। এটা জব্দ করা হয়েছে। যে বা যারা জড়িত থাকুক কঠোরভাবে আইনগতভাবে ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হবে।”

পরিদর্শনের সময় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের জেনারেল ম্যানেজার মো. মুসা খান ও বান্দরবান শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ওসমান গণি।

বুধবার সকালে রুমা শাখার সোনালী ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা প্রশাসনের লাগোয়া সোনালী ব্যাংকটির কার্যালয়। দ্বিতল ভবনটির প্রতিটি কক্ষে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কাগজপত্র। টেবিলের উপর থাকা কাচগুলো ভাঙা।

কম্পিউটারগুলো ভাঙাচোরা হয়ে এলোমেলো পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন ইলেকট্রিক্যাল পয়েন্টগুলোও ভাঙা হয়েছে। এমনকি রুমের দরজা জানালাও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে।

চা দোকান থেকে ধরে নেয়া হয় ক্যাশিয়ারকে: ব্যাংকটি ক্যাশিয়ার উথোয়াইচিং মারমা সাংবাদিকদের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, “সোমবার ৮টার দিকে বাইরে একটা দোকানে চা খেতে যান। তখন হঠাৎ করে তিনজন সশস্ত্র ব্যক্তি তাকে ঘিরে ফেলে। তাকে বন্দুক তাক করে পকেটে তল্লাশি করে চাবি কেড়ে নিয়ে যায়। পকেটে থাকা ১২০০ টাকাও নিয়ে যায়। “তখন শতাধিক ব্যক্তিকে ব্যাংক ঘিরে রাখতে দেখা যায়। তারা ভেতরে সবকিছু তছনছ করে ফেলে।” ক্যাশিয়ার বলেন, “ভল্ট খুলতে গেলে দুইজনের চাবি লাগবে- ক্যাশিয়ার এবং ম্যানেজাররের। আমার মনে হয়, আমার কাছে থাকা চাবি তারা ভল্ট খোলার চেষ্টা করেছে। ম্যানেজার থেকে চাবি না পেয়ে তাকে হয়ত তুলে নিয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “সামনে পাহাড়িদের বর্ষবরণ উৎসব এবং ঈদের জন্য বেতন ভাতা দেয়ার জন্য ব্যাংকে মোট এক কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা ছিল।”

বান্দরবানের রুমা উপজেলার সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে কোনো টাকা লুট হয়নি। ওই ব্যাংকের ভল্টে থাকা সব টাকা অক্ষত আছে। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ এসব কথা বলেন। শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, সিআইডির চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার ইউনিটের দুটি দল রুমায় গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। পরে ব্যাংকের ভল্ট খুলে সব টাকা গুণে দেখা হয়। দেখা যায়, মঙ্গলবার রাখা ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকার পুরোটা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, দুটি চাবি একসঙ্গে দিয়ে ভল্ট খুলতে হয়। কোনো কারণে অস্ত্রধারীরা হয়তো ভল্ট খুলতে পারেনি।বান্দরবানের রুমায় নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যরা মঙ্গলবার রাতে সোনালী ব্যাংকের শাখায় ডাকাতির চেষ্টা করে।

স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, কেএনএফ সদস্যরা ব্যাংকের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ সদস্য এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে পাহারায় থাকা আনসার সদস্যদের কাছ থেকে দুটি এসএমজি (লাইট মেশিন গান) ও ৬০টি গুলি,৮টি চীনা রাইফেল ও ৩২০টি গুলি এবং ৪টি শটগান ও ৩৫টি কার্তুজ নিয়ে গেছে। মঙ্গলবার রাতে ডাকাতির পর ব্যাংক ও উপজেলা পরিষদের সামনে পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। রয়েছেন র‍্যাবের সদস্যরাও। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন, জেলা পুলিশ সুপার শাহিন সৈকতসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। বান্দরবান রুমা সড়কের উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে ঢোকার মুখে রয়েছে একটি দোতলা ভবন। এটির নিচতলায় থাকেন সরকারি কর্মকর্তারা। দ্বিতীয় তলার এক পাশে সোনালী ব্যাংক রুমা শাখা। আরেক পাশে থাকেন ব্যাংকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১০ জন পুলিশ সদস্য। কেনএনএফের অস্ত্রধারীরা যাওয়ার সময় সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নিজামুদ্দিনকে নিয়ে যায় বলে স্থানীয় লোকজন বলছেন।

উদ্বিগ্ন সরকারি কর্মকর্তাদের মানববন্ধন: এদিকে ব্যাংক ম্যানেজারের মুক্তি ও চাকরিরত সরকারি কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বিভিন্ন কার্যালয়ে কর্মরতরা। রুমা উপজেলা কার্যালয়ের পাশে এই মানববন্ধনে ‘জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে’ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন অংশ নেন তারা। রুমা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) খালেদ রাউজান খান বলেন, “আমরা পরিবার-পরিজন রেখে অনেক দূর থেকে এসে এই দুর্গম এলাকায় জনগণকে সেবা দিতে এসেছি, কিন্তু আমাদের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নাই। “গতকাল আমাদের কর্মকর্তাদের মেরে সব তছনছ করে দিয়েছে। আমরা এদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়তেছি। আমরা কী অপরাধ করেছি।”

দ্রুত ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আমাদের নিরাপত্তা দিন। এভাবে যদি আমাদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়ে তাহলে তো আমরা চাকরী করতে পারব না।”

৬ উপজেলার সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ : বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় সদর উপজেলা বাদে জেলার ছয়টি উপজেলার সব ব্যাংকের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বান্দরবান সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ওসমান গণি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে রুমা সোনালী ব্যাংক এবং গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় থানচির সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় নিরাপত্তার স্বার্থে রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সব ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/আরজে

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ