সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছে ২৩ নাবিকসহ জিম্মি চট্টগ্রামের কেএসআরএমের মালিকানাধীন বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের মালিকপক্ষের সাথে অবশেষে যোগাযোগ শুরু করেছে জলদস্যুরা।
জাহাজটি দখলে নেওয়ার ৯ দিনের মাথায় বুধবার (২০ মার্চ) জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। জাহাজের মালিকপক্ষ জানিয়েছে, তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ হলেও এখনও মুক্তিপণের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বলেন, থার্ড পার্টির মাধ্যমে জলদস্যুদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। জাস্ট প্রাথমিক আলাপ হয়েছে। মুক্তিপণ কিংবা অন্য কোনো বিষয়ে এখনও বলার মতো কোনো আলাপ হয়নি। যেহেতু, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর, এ মুহূর্তে আর কোনো তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়।
জানা গেছে, জিম্মি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে এখন সোমালিয়ার নুগাল প্রদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা শহর গদবজিরানের কাছাকাছি উপকূলে নোঙ্গর করে রেখেছে জলদস্যুরা। জিম্মি করার পর থেকে নাবিকদের সঙ্গে তাদের পরিবার ও মালিকপক্ষে কয়েকদফা যোগাযোগ হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, জলদস্যুরা তাদের কোনো ধরনের চাপ কিংবা নির্যাতন না করলেও তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। দ্রুততার সঙ্গে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তির আকুতিও জানিয়েছেন তারা।
এ অবস্থায় জাহাজের মালিকপক্ষ এবং সরকার জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের অপেক্ষায় ছিল। আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ প্রয়োগ কিংবা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্ত করার প্রস্তাব এলেও তাতে সাড়া দেয়নি মালিকপক্ষ। বরং তারা তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদও সর্বশেষ জানিয়েছিলেন, বীমা প্রদানকারী ও জাহাজ মালিকদের সমন্বয়ে গঠিত সংস্থা ‘পিঅ্যান্ডআই ক্লাব’র মাধ্যমে ‘সমঝোতার’ মধ্য দিয়ে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ ও নাবিকদের মুক্ত করার প্রচেষ্টা চলছে।
এর আগে, ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুরা গত ১২ মার্চ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টার দিকে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ নামে জাহাজটিকে ২৩ নাবিকসহ দখলে নেয়। জাহাজটি আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে যাচ্ছিল। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির স্টিল অ্যান্ড রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন।
জাহাজে থাকা নাবিকরা হলেন- জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. নুর উদ্দিন ও মো. সালেহ আহমদ।
কেএসআরএম গ্রুপের মোট ২৩টি জাহাজ আছে, যেগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করছে। ‘গোল্ডেন হক’ নামে পরিচিত ‘এমভি আবদুল্লাহ’ গত বছর কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানায় আসে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারতের উপকূলে আরব সাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি জাহাজ ‘এমভি জাহান মণি’। ওই জাহাজের ২৫ বাংলাদেশি নাবিকের পাশাপাশি এক ক্যাপ্টেনের স্ত্রীসহ ২৬ জনকে ১০০ দিন জিম্মি করে রাখা হয়েছিল। সরকারি উদ্যোগসহ নানা প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ১৪ মার্চ জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ তারা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
নয়া শতাব্দী/এসএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ