ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

হাতে কুরআন লিখে তাক লাগালেন ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী

প্রকাশনার সময়: ০২ মার্চ ২০২৪, ১৮:২০ | আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪, ১৮:৫৯

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে নুরে জারিন নুদার নামে ৬ষ্ঠ শ্রেণির একজন ছাত্রী মাত্র ১০ মাসে হাতে কুরআন লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

নুরে জারিন নুদার বসুরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মো. নুরুল হুদা মামুনের মেয়ে। নুদার বসুরহাট দারুল ইহসান গার্লস মাদরাসার ছাত্রী।

নুরে জারিন নুদার বর্তমান সময়ের ছেলে-মেয়েদের থেকে একটু আলাদা। যে বয়সে মেয়েরা মুঠোফোন নিয়ে ব্যস্ত, সেই বয়সে ক্ষুদে এ শিক্ষার্থী হাতে কুরআন লিখে পার করছে ব্যস্ত সময়। তার গল্প শুনলে অনেকেরই চোখ কপালে উঠবে। এই মাদরাসা শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়তে হয়নি কোনো ক্লাসেই। মাত্র ১০ মাসে নির্ভুলভাবে সে পুরো আল-কুরআন হাতে লিখেছে। তার দৃষ্টিনন্দন হাতের লেখা দেখলে যে কারো চোখ আটকাবে। মনে হবে, এটি কম্পিউটারে ছাপা লেখা। চোখ জুড়ানো হাতের লেখায় পবিত্র কুরআন লিখে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে নুরে জারিন নুদার।

২০২২ সালের সেপ্টম্বর মাসের ঘটনা। তখন ১০ বছর বয়সী নুদার বাড়ির পাশের ইকরা আরাবিয়া মাদরাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। একদিন হঠাৎ মেয়ের সুন্দর আরবি হাতের লেখা চোখে পড়ে বাবার। এরপর তিনি মেয়েকে উদ্বুদ্ধ করেন পবিত্র কুরআন হাতে লিখতে। যেই কথা, সেই কাজ। মেয়েকে প্রথমে এক রিম খোলা সাদা কাগজ এনে দেন তিনি। সেই থেকে শুরু। এরপর আস্তে আস্তে ১০ মাসে কুরআন লিখে শেষ করে নুদার। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে শেষ হয় তার এই লেখা। এরপর তার বাবা হাতে লিখা কুরআন শরীফ নিয়ে নুদারের মাদরাসার আরবী শিক্ষক মুফতি মুহা. আবদুল্লাহ আল নোমানের কাছে যান। তখন থেকে নুদারের লেখা শেষে তিনি বানান সংশোধন করে পুনঃনিরীক্ষণ করে দিতেন। তার উৎসাহ ও সহযোগিতায় নুদারের লেখা আরও গতি পায়। পরবর্তীতে পান্ডুলিপি থেকে ১০ পারা করে তিন ভাগে পুর্ণাঙ্গ কুরআন বাঁধাই করা হয়।

কুরআন লিখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৬১১টি এ ফোর সাইজের সাদা কাগজ ও ৫৫টি বলপেন কলম। মেয়ের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত মা-বাবা, দাদা-দাদিসহ এলাকাবাসী। মা-বাবার আশা, মেয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে দেশবাসীর কল্যাণে দ্বীনি শিক্ষা প্রসারে কাজ করবে।

নুরে জারিন নুদার বলেন, বাবা-মায়ের উৎসাহে আমি চতুর্থ শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় পবিত্র কুরআন লেখা শুরু করি। এরপর পঞ্চম শ্রেণিতে উঠলে আমার লেখা শেষ হয়। আমার এ লেখা দেখে মা-বাবা আমাকে মাদরাসায় পড়ালেখার পাশাপাশি এখন হিফজ বিভাগে ভর্তি করে দেন। আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।

নুদারের বাবা মো. নুরুল হুদা বলেন, আমি প্রথমে আমার মেয়ের সুন্দর আরবি হাতের লেখা দেখে খুব আনন্দিত হই। আমার ও তার শিক্ষকদের উৎসাহে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সে কোরআন নিজ হাতে লেখা শুরু করে। যখন এক পারা লেখা সম্পন্ন হতো তখন ইকরা আরাবিয়া মাদরাসার শিক্ষক মুফতি মুহা. আবদুল্লাহ আল নোমান আরবি বানানগুলো যাচাই বাচাই করে পুনঃনিরীক্ষণ করে দিতেন। এভাবে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে পুরো কুরআন লিখে শেষ হয়। পরে পুনরায় আবার বানান পুনঃনিরীক্ষণ করে ১০ পারা করে তিন ভাগে বাঁধাই করা হয়। মেয়ের এমন কাজে আমি গর্বিত। এমন কাজে অন্য ছেলেমেয়েরা উদ্ধুদ্ধ হবে বলেও আমি আশা করি।

মা বিবি ফাতেমা বলেন, আমার মেয়ে নিজ হাতে কুরআন লিখেছে। আমরা তাকে উৎসাহ দিয়েছি। লিখতে গিয়ে অনেক সময় মনমানসিকতা অন্যরকম হয়ে যেত। আবার মনমানসিকতা ঠিক করে আগ্রহ দিয়ে লিখতে বসত। বিশেষ করে ভালো কাজে শয়তানের প্ররোচনা থাকে। খাতা-কলমে দাগ টানাসহ বিভিন্নভাবে তাকে আমি সহযোগিতা করেছি। চার বছর বয়স থেকে নুদার নিয়মিত নামাজ পড়ে। ইকরা আরাবিয়া মাদরাসার নাজেমে তালিমাত মুফতি মুহা. আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, নুদার অত্যন্ত সুনিপুনভাবে ১০ মাসের প্রচেষ্ঠায় কুরআন হাতে লিখে সম্পন্ন করে। ওই সময় আমি তার লেখার তত্ত্বাবধান করি। বোঝার উপায় নেই, এটি হাতে লেখা নাকি কম্পিউটারে লেখা। তার লেখা কুরআন পুরোটাই আমি পুনঃনিরীক্ষণ করি।

ইকরা আরাবিয়া মাদরাসা মোহতামিম মাওলানা মোতালেব হোসেন পারভেজ বলেন, নুরানী বোর্ডের সমাপনী পরীক্ষায় নুদার পুরো বাংলাদেশে দশম স্থান অর্জন করে। সে একজন মেধাবী ছাত্রী। তার স্বহস্তে কুরআন লেখার এ কৃতিত্বকে আমরা স্বাগত জানাই। বসুরহাট পৌরসভা ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবিএম ছিদ্দিক বলেন, পবিত্র কুরআন হাতে লেখার উদ্যোগ নিয়ে সম্পন্ন করার কাজটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। হাতে এতো সুন্দরভাবে কুরআন লিখলে সেটি আসলেই অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। আমি তার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।

নয়াশতাব্দী/টিএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ