জামালপুর সদরে যৌতুকের টাকা না পেয়ে মায়া আক্তার নিশি (১৯) নামে এক গৃহবধূকে গরম পানি ঢেলে ঝলসে দিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামালপুর শহরের গেটপাড়ে একটি ভাড়া বাড়িতে এ অমানবিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।
জামালপুর সদর থানায় গৃহবধূর বড় বোন মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে একটি মামলার দায়ের করেন।
এ ঘটনায় গৃহবধূর শশুর আশেক আলীকে আটক করেছে পুলিশ। স্বামী শিক্ষক আল-আমিন (৩৩) পালাতক রয়েছেন।
আল আমিনের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চর মল্লিকপুর এলাকায়। তিনি শাহবাজপুর ইউনিয়নের জাফর শাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।
জানা যায়, মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের নাগেরপাড়া এলাকার সৌদি প্রবাসী আব্দুল মান্নানের মেয়ে নিশির সাথে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় আল-আমিনের। প্রায় ১০ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় ঝগড়া-বিবাদ। গত ৩ মাস আগে জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসা নেন শিক্ষক আল-আমিন। ভাড়া বাসায় স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন।
সোমবার দুইজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে আল-আমিন নিশিকে ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে মারতে শুরু করেন। পরে চা তৈরির জন্য রাখা গরম পানি নিশির শরীরে ঢেলে দেন। গরম পানিতে মুহূর্তে ঝলসে যায় তার শরীর। পরে কিছু ওষুধ কিনে এনে নিশিকে দেন। এই ঘটনা কাউকে না জানাতে বলে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। ৭ দিন তালাবদ্ধ থাকার পর অসুস্থ বেশি হয়ে পড়লে শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসার জন্য নিশিকে নিয়ে যান। এ সময় নিশি কৌশলে বড় বোনকে ফোন করলে ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যায় শিক্ষক স্বামী আল-আমিন। পরে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মায়া আক্তার নিশি বলেন, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে যৌতুকের টাকা দাবি করে কথা কাটাকাটি হয় আমাদের। পরে আল-আমিন আমার গলায় টিপ দিয়ে ধরে। হাত বেঁধে মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে চা বানানোর জন্য করা গরম পানি আমার শরীরে ঢেলে দেন। গরম পানি ঢেলে আমাকে ছেড়ে দিলে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে বের হই। এ সময় আমি কান্না করলে, আমাকে দেখে হাসতে থাকেন। পরে দোকান থেকে কয়েকটা ওষুধ নিয়ে আসে। কাউকে না জানানোর জন্য আমাকে ভয় দেখান।
প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় বাইর থেকে রুমে তালা মেরে স্কুলে চলে যেত। আবার বিকেলে বাসায় আসতো। সাত দিন আমাকে তালা মেরে রাখে। শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হলে আমাকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে অন্যজনের মোবাইল দিয়ে আমি বড় বোনকে ফোন করি। তখন আমার বোন আসলে আল-আমিন পালিয়ে চলে যা।
ভুক্তভোগী নিশির মা নার্গিস বেগম বলেন, মেয়ের পিঠে, বুকে ও পেটে আর কোনো অবস্থা নেই। গরম পানি ঢেলে একবারে ঝলসে দিয়েছে। এতটা ঝলসে দিয়েছে যে, কেউ দেখলে ভয় পাবে। আমার মেয়ে তো কোনো অপরাধ করে নি। এভাবে নির্যাতন করার কি দরকার ছিল। আমি বিচার চাই।
মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, মানুষ কতটা নির্মম হলে এতটা নির্যাতন করতে পারে। গরম পানি ঢেলে দিয়ে স্বামী হাসতে থাকেন। এ সময় তাকে চিকিৎসা না করে উল্টো ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখেন। একজন শিক্ষক স্বামী হয়ে এই কাজ কিভাবে করতে পারেন। দ্রুত আল-আমিনকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, নিশির শরীরের প্রায় ২০ শতাংশ ঝলসে গিয়েছে। চিকিৎসা চলছে, সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহব্বত কবীর বলেন, এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। প্রধান অসামি আল-আমিন পলাতক। ইতোমধ্যে, একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
নয়াশতাব্দী/টিএ
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ