ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
ভূমি অধিগ্রহণের টাকা তুলতে

পদে পদে ঘুষ নেন ৩ কর্মকর্তা, অনুসন্ধানে দুদক

প্রকাশনার সময়: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:৪৭

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে দুদকের প্রাথমিক তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানের পরবর্তী কার্যক্রমে জন্য মহাপরিচালককে (তদন্ত-২) গত ২৮ জানুয়ারি চিঠি দিয়েছেন সংস্থাটির অভিযোগ সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল।

জানা গেছে, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের ফারাক্কাঘোনা এলাকার বাসিন্দা সোহানোর রহমানের দুই একর ৩১ শতক জমি কালারমারছড়ায় স্থাপিত সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অধিগ্রহণের ২ কোটি ৩৩ লাখ ৭ হাজার টাকা তুলতে গিয়ে পদে পদে ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন সোহান। চেক হাতে পাওয়ার আগেই প্রথমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় দিতে হয়েছে ১১ লাখ টাকা। এর পর ক্লিয়ারেন্সের জন্য চেক জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠানো হয়। সেখানে ঘুষের জন্য শুরু হয় টালবাহানা। শেষ পর্যন্ত প্রতি লাখে ৩০০ টাকা হিসাবে ৭০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে ১১ দিন পর চেকের ক্লিয়ারেন্স নেওয়া হয়।

অভিযোগ উঠেছে, হিসাবরক্ষণ অফিসে ঘুষ ছাড়া কারও চেকের ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হয় না। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে অফিসের তিন কর্মকর্তাসহ চারজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তারা হলেন– জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাহাবুদ্দিন, অডিটর সাইফুল ইসলাম, সাইফুর রহমান ও এমএলএসএস মোহাম্মদ বাবুল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখা নিয়ে যেন ভুক্তভোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। জেলাজুড়ে সরকারের চলমান মেগা প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ হওয়ার পর, সেই টাকা আদায় করতে গিয়ে পদে পদে হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এখানে কার জমির টাকা কে তুলে নিয়ে গেল, তারও সঠিক ব্যাখ্যা নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৮ মাসে জেলা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা ছাড় হয়েছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ ১৬ হাজার। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছাড় হয়েছে ৬২৬ কোটি ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।

এ বিষয়ে হিসাবরক্ষণ অফিসের সদ্য বদলি হওয়া কর্মকর্তা অভিযুক্ত সাহাবুদ্দিন নয়া শতাব্দীকে বলেন, ‘এসবের পেছনে আমাদের একজন কর্মকর্তার ইন্ধন রয়েছে। দুদকের তদন্তের বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না।’

হিসাবরক্ষণ অফিসে সদ্য যোগদান করা জেলা কর্মকর্তা হাবিবুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনিও বিষয়টি নিয়ে ফোনে কথা বলতে রাজি হননি।

কক্সবাজারে চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর জন্য জমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে দুদক তদন্ত শুরু করেছে অনেক আগেই। পাশাপাশি হিসাবরক্ষণ অফিস নিয়ে নতুন করে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।

কক্সবাজারে ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের শুরুতেই ভূমি অধিগ্রহণে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এগুলো হচ্ছে– কক্সবাজার পৌরসভার পানি পরিশোধনাগার প্রকল্প, শহরে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কার্যালয় নির্মাণ এবং মহেশখালীতে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) নির্মাণ প্রকল্প। ২০১৮ সালে এসব প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হয়।

২০২০ সালে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে কক্সবাজার শহরের এক বাড়িতে অভিযান চালায় র‍্যাব। সেখানে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মোহাম্মদ ওয়াসিম খানকে গ্রেপ্তার করে তারা। বাসায় পাওয়া যায় ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরে দুই দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই বাসায় পাওয়া যায় এ তিন প্রকল্পের সরকারি ভূমিসংক্রান্ত সাত বস্তা নথি। এতে ছিল জমি অধিগ্রহণের জন্য দেওয়া ক্ষতিপূরণের চেক, জমির মালিকদের করা আবেদন ও ভূমিসংক্রান্ত অন্যান্য নথি। ওই নথির সূত্র ধরেই তিনটি আলাদা প্রকল্প নিয়ে তদন্ত শুরু করে দুদক। এ তদন্ত নিয়ে দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরখাস্তসহ নানা নাটকীয়তা ঘটেছে এরই মধ্যে।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে তিনটি প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে মোট ৭৮ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এর মধ্যে তছরুপ হয়েছে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা। এ দুর্নীতিতে ১৫৫ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।

নয়া শতাব্দী/এসএমআর/এনএস

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ