ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শতবর্ষের ঐতিহ্য কটিয়াদির কুঁড়িখাই মেলা শুরু

প্রকাশনার সময়: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৩৯ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:৫৪

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলায় কুঁড়িখাই মেলাটি শতবছরের ঐতিহ্য। প্রতি বছর সাড়ম্বরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার লোকজন এ মেলায় অংশগ্রহণ করে। মেলা শুরু হলে দর্শনার্থীর মাঝে একটা বাড়তি আমেজ পরিলক্ষিত হয়। মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন রকমের পসরা সাজিয়ে রেখে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে দোকানিরা। কুঁড়িখাই মেলাটি দেশের মধ্যে প্রাচীন এবং বড় গ্রামীণ মেলা।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হয়েছে এ মেলা, চলবে সপ্তাহব্যাপী। উপজেলার সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মুমুদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই এলাকায় এ মেলার আয়োজন করা হয়। যা কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুঁড়িখাই এলাকায় হযরত শাহজালাল (রহ.) এর বংশধর হযরত শাহ সামছুদ্দীন (রহ.) এর সমাধি সংলগ্ন এলাকায় প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ সোমবার মেলা শুরু হয়। হযরত শাহ সামছুদ্দীন (রহ.) ছিলেন বুজুর্গ লোক। মৃত্যুর পর স্থানীয়রা তার কবরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। এক পর্যায়ে তা মাজারে রূপান্তর করে মেলা ও ওরশ শুরু করে। মাজারে মানুষ টাকা ও জিনিসপত্র দান করা শুরু করে। মোটা অঙ্কের টাকা ওঠে। তবে অধিকাংশই ওরশ, মাজার ও গান বাজনার পক্ষে না। এমন একজন ওলীর কবরকে এভাবে ব্যবহার করায় ক্ষোভ রয়েছে অনেকের মনে।

সপ্তাহব্যাপী মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সার্কাস, মৃত্যুকূপ, নাগরদোলা, পুতুল খেলাসহ রকমারি পসরা নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। বসে বিভিন্ন ধানের খই, কদমা, বাতাসা, গুড়, জিলাপির দোকান। এই মেলায় পাওয়া যায় বিশাল বিশাল মাছ, কাঠের আসবাবপত্র। পার্শ্ববর্তী কৃষি জমিসহ বিশাল চত্বরে বসে এই মেলা।

মেলা শুরু হয়ে আশপাশের সমস্ত এলাকা প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার পরিবারগুলো আগে থেকেই টাকা জমিয়ে রাখতে থাকে মেলায় খরচ করবে বলে। দূরবর্তী আত্মীয়স্বজনকে মেলার বিশেষ দাওয়াত দেওয়া হয়। চারদিক থেকে এলাকার ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষের সপ্তাহব্যাপী দীর্ঘ লাইন থাকে মেলার দিকে।

এই মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মাছের হাট। মেলায় বিশাল এলাকাজুড়ে বসে মাছের হাট। এই হাটে বোয়াল, চিতল, আইড়, রুই, কাতল, সিলভার কার্পস, পাঙ্গাস, মাগুর, বাঘাইরসহ নানা ধরনের অন্তত ৪ শতাধিক মাছের দোকান বসে। মাছ বিক্রেতারা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা সুনামগঞ্জের হাওর ও নদী থেকে এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে এসব মাছ সংগ্রহ করে মেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের লোকজন এই মেলা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান। এছাড়া মেলায় হাজারো দর্শক আসেন মাছ দেখতে। মেলার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে প্রতি বাড়িতে মেলা উপলক্ষ্যে নতুন জামাই ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াতের রীতি রয়েছে।

মেলাকে ঘিরে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। তবে কয়েক বছর ধরে মেলার জিনিসপত্রের দাম চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। এর কারণ হচ্ছে নিলামে ইজারা বিক্রি। ডাক প্রথা বন্ধ হলে মেলা আগের রুপে ফিরবে। অবস্থা এমন চলমান থাকলে মেলার আকর্ষণ এবং জৌলুশ হারাতে বসেছে। যদিও মেলা কমিটির সংশ্লিষ্টরা বলছেন মূল্য স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হবে।

জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মেলায় জায়গা পেতে তাদের টাকা দিতে হয়, স্থান ভেদে ডিমান্ড বেশি হয়। ফলে এর প্রভাব পড়ে জিনিসের উপর।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ