ঢাকা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মহররম ১৪৪৬

টিসিবির পণ্য বিতরণের সময় নারীকে চড় মারার অভিযোগ

প্রকাশনার সময়: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৭:৪৫

চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে টিসিবির পণ্য বিতরণের সময় রসনা বেগম নামে এক নারীকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে ডিলার জিহাদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও স্থানীয়দের অভিযোগ, টিসিবিতে খুবই নিম্নমানের চাল দেয়া হচ্ছে।

শনিবার সকাল ৮টার দিকে জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন পষিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী রসনা বেগম আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টিসিবির ডিলার আয়ান মুদি স্টোরের জিহাদ হোসেন ও রকি টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় রসনা বেগম নামের এক নারী টিসিবির পণ্য নিতে পরিষদে আসেন। পণ্যের সাথে তেলের বোতল না পেয়ে ডিলারের কাছে অভিযোগ করলে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। একপর্যায়ে ডিলার জিহাদ হোসেন ওই নারীকে চড় মেরে বের করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, টিসিবির পণ্যে যে চাল দেওয়া হয়েছে, তা খুবই নিম্নমানের। এমন চাল গরুকেও খাওয়ানো হয় না। তারা দুর্গন্ধযুক্ত চালের ভাত খাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী রসনা বেগম বলেন, শনিবার মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদে টিসিবির পণ্য আনতে গিয়েছিলাম। আমি মোট তিনজনের কার্ড নিয়ে গিয়েছিলাম। পরিষদে আমাকে পণ্য দেয়ার পর নিচে নেমে দেখি আমার প্যাকেটে তেলের বোতল নেই। পরে আমি ডিলার জিহাদের কাছে গিয়ে তেলের বোতলের কথা বললে সে বলে তেল দিয়েছে। অথচ আমি তেলের বোতল পাইনি। পুনরায় তাকে তেলের কথা বললে সে গালাগালি শুরু করে এবং আমার পিঠে চড় মেরে নিচে নামিয়ে দেয়।

প্রত্যাক্ষদর্শী মনোহরপুর ইউনিয়নের সাবেক মহিলা মেম্বার হাবিবা খাতুন জানান, রসনা বেগম ওদের কাছে যেয়ে বলছে আমি তেল পাইনি। আর ওই লোকটা (জিহাদ) খুব গালাগালি করে ওনাকে। তীব্র গালাগালির পর রসনা বেগম না সরে যাওয়ায় জিহাদ ওনার পিঠে কষে এক চড় মেরে দেয়। পরে উনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সেক্রেটারিকে ডেকে নিয়ে যান। উনি এসে বললেও তেল না দিয়েই চলে যায়।

প্রত্যাক্ষদর্শী হামিদুর রহমান জানান, টিসিবির পণ্য দেওয়ার সময় আমার চাচির সাথে ঝগড়া-গণ্ডগোল হচ্ছিল, গালাগালিও হচ্ছিল। হাতাহাতিও হয়েছে। আমি যেয়ে বাঁধা দিয়েছি। পরে পুলিশের ভয় দেখালে আমরা চলে এসেছি।

এ ঘটনায় টিসিবির পণ্য বিতরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ট্যাগ অফিসার আকিমুল ইসলাম জানান, এমন একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছিল। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসা করে দিয়েছি। নারীকে চড় মারার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি বাইরে ছিলাম। হট্টগোল দেখে ভেতরে গিয়েছিলাম। সে সময় এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে আমি যাওয়ার আগে কী হয়েছে, তা জানি না।

নিম্নমানের চাল বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, চাল আমিও দেখেছি যে এটা নিম্নমানের। এখানে আমার কিছুই বলার নেই।

অভিযুক্ত ডিলার রকি বলেন, ওই নারী তেল পায়নি, এমন অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসে। আমরা বলেছি যে তেল দেয়া হয়েছে। তারপরও ওই নারী না শুনলে বলেছি, পণ্য বিতরণ শেষে তেলের বোতল থাকলে দেয়া হবে। এসময় ট্যাংরা নামের এক ব্যক্তি এসে জিহাদকে চড় মারে। ওই নারীকে চড় মারার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমন কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি।

ডিলার জিহাদ হোসেন বলেন, ‘ওই নারীকে চড় মারা হয়নি। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে একটু ধাক্কা দিয়েছি মাত্র। এটা তেমন গুরুতর কিছু না, যে নিউজ করতে হবে।’

নিম্নমানের চাল বিতরণের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে যে চাল আসে, সেটাই আমরা বিতরণ করি। এখানে বাইরে থেকে চাল নিয়ে এসে বিতরণের কোনো সুযোগ নেই।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, আমি দুজন ডিলারসহ উভয়পক্ষকে ডেকেছিলাম। মূলত ঘটনা হচ্ছে, ওই নারী তিনজনের পণ্য উঠানোর পরে আরও কার্ড নিয়ে যান। কিন্তু ওই সময় তেল ছিল না। তাকে বলা হয় যে তেল পরে দিবে। এ সময় ওই নারীর ট্যাংরা নামের এক আত্মীয় এসে ডিলারকে চড় মারে। পরে ডিলার ওই নারীকে হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। বিষয়টি সাথে সাথেই ওখানে নিষ্পত্তি করা হয়।

এছাড়াও নিম্নমানের চাল বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নয়া শতাব্দী/এসএ

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ