ঢাকা, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে গোলযোগ, বিপর্যস্ত শিক্ষা

প্রকাশনার সময়: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:০৪

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের শূন্য রেখার ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গত কয়েকদিন ধরেই ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। তাদের দুপক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে আরপিজি, মর্টারশেল আর গুলি এসে পড়ছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

এদিকে, নিরাপত্তার কারণে রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম ইউনিয়নের পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয় জরুরি ভিত্তিতে বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। বন্ধ বিদ্যালয়গুলো হলো- ভাজাবনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইশফাঁড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম কুল তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়গুলো কয়েকদিন ধরে বন্ধ থাকায় আর সীমান্তজুড়ে প্রতিদিনই আতঙ্ক বাড়ায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় মোট ৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আব্দুল মান্নান জানান, নিরাপত্তার কারণে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে নাইক্ষ্যংছড়ির ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। আমরা সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে সার্বক্ষণিক জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ রাখছি আশা করছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে সীমান্তে গোলযোগপূর্ণ সময়ের মধ্যেই নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার একটি কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে এবং কেন্দ্রটিতে পরীক্ষা নেয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, আগামী ১৫ফেব্রুয়ারি সারা দেশের মতো বান্দরবানেও শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষায় বান্দরবানের ৭ উপজেলায় ১৫টি কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজার ২শত ২৫ জন। আর নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫শত।

ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রাশেদ বলেন, আমাদের বাড়ি ও বিদ্যালয় সীমান্ত এলাকার একদম কাছে। গত কয়েকদিন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গোলাগুলির বিকট শব্দ আর গোলার আওয়াজে আমাদের পড়াশোনার বিঘ্ণ ঘটছে। এ ছাড়া আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।

ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব ও প্রধান শিক্ষক খাইরুল বশর বলেন, সীমান্তের ওপারে কয়েকদিনের গোলাগুলিতে আমাদের সবার মনে নতুন নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে, কখন কি হয়। প্রাথমিকভাবে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা রেখেছি, যদি পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয় তাহলে কেন্দ্র পরিবর্তন হবে।

বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক) মুহাম্মদ ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সীমান্তে উত্তোজনা বেড়েই চলেছে। এদিকে সীমান্তে গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ায় পরপরই আমরা সর্তক রয়েছি। শ্রেণি কার্যক্রম বর্তমানে চলমান রয়েছে এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

সীমান্তে উত্তোজনা বৃদ্ধি পেলে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন করে অন্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ায় সার্বিক প্রস্তুতি প্রশাসনের রয়েছে বলে জানান তিনি।

জেলা শিক্ষা অফিসার (মাধ্যমিক) আরও বলেন, বর্তমানে সীমান্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের বাসায় বাসায় গিয়ে লেখাপড়ার খোঁজ নিচ্ছি এবং তাদের শিক্ষার উন্নয়নে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তের বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে বিজিবির টহল আরও জোরদার করা হয়েছে এবং শিক্ষা কার্যক্রম যাতে বিনষ্ট না হয় সেজন্য শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ