রাজশাহীতে বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ট জনসাধারণ। হত্যা, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, মাদক সেবনসহ নানা অপরাধে জড়াচ্ছে তারা। স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের রাস্তঘাটে উত্ত্যক্ত করছে। ভুক্তভোগীরা ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগও দিতে পারছেন না।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন রাসিকের কতিপয় কাউন্সিলর। দুই বছর আগে মহানগরীতে ৫ শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্যের একটি ডাটাবেজ তৈরি করেছিল রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিট। কিন্তু নিয়মিত নজরদারির অভাবে এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাং সদস্যের সংখ্যা আরও বাড়ছে।

পুলিশ বলছেন, কিশোর গ্যাং সদস্যদের অনেকেই এসেছে সচ্ছল পরিবার থেকে। তাদের সঙ্গে জোট বাঁধছে নগরীর বস্তির কিশোর যুবকরা। এদের অনেকেরই দামি মোটরসাইকেল রয়েছে। সন্ধ্যা হলেই তারা তিনজন করে মোটরসাইকেলে চড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। পথে কোনো পথচারী বা অটোরিকশা যাত্রীর ব্যাগ দেখলেই তারা টান দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। গত একমাসে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এমন ২৬টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

সম্প্রতি নগরীর শাহ মখদুম থানার গাংপাড়ায় আরাফাত হোসেন নামে এক কিশোরকে মারধরের পর অস্ত্র উঁচিয়ে নৃত্য করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বাদ্যের তালে তালে চাইনিজ কুড়াল, ধারাল ছুরি, রাম-দা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নৃত্য করছে। পরে পুলিশ তাদের সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

জানা যায়, বিভিন্ন ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় নানা নামে গড়ে উঠেছে কিশোর গ্যাং। এর মধ্যে রয়েছে, ‘টেন স্টার বয়’, ‘রাইজিং বয়’, ‘অদম্য বালক’। এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের অনেকে সারাদিন ঘুমায়, রাত হলেই নানা অপরাধে জড়ায়।

গত বছর ২৯ অক্টোবর রাতে রাজশাহী রেলস্টেশন এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন বাগমারার দুই কলেজ ছাত্র কৌশিক ও অভিজিৎ। ধারাল অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে উভয়ই হাসপাতালে ভর্তি হন। কৌশিকের বুকে ৫০টি এবং অভিজিতের বুকে ৩০টি সেলাই দিতে হয়েছে।

১৭ সেপ্টেম্বর ভোরে নগরীর রাজারহাতা এলাকায় ছিনতাইকারীর আঘাতে রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র নিশাদ আকরাম গুরুতর আহত হন। ১৬ দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়।

গত বছরের ৭ এপ্রিল ছিনতাই করে পালানোর সময় অনিক (১৯) নামে এক কিশোর গ্যাং সদস্য নগরীর ডাবতলায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু বরণ করে। এ সময় তার আরেক সহযোগী মারুফ হোসেন (১৮) মারাত্মক আহত হয়।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশ। আগে নগরীতে পাঁচ শতাধিক কিশোর গ্যাং সদস্য ছিল। এই সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।

নতুন কোনো গ্রুপ তৈরি হচ্ছে কি-না পুলিশ সেদিকে নজর রাখছে বলেও তিনি জানান।

নয়াশতাব্দী/টিএ/একে