ঢাকা, রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

অনলাইন-অফলাইনে সক্রিয় জামায়াত

প্রকাশনার সময়: ০৬ মে ২০২৪, ০৭:২১ | আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ০৮:৫০

দীর্ঘ এক দশক আত্মগোপনে থাকার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ থেকে অনলাইন ও অফলাইনে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। রাজধানীসহ সারা দেশে প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে দলটির নানা কর্মকাণ্ড। চলছে জোরেশোরে প্রচারণা। অতীতের মতো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর অভিযান কিংবা তেমন কোনো বাধা সম্মুখীন হতে হচ্ছে না তাদের। হঠাৎ জামায়াতের নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। গুঞ্জন রয়েছে সরকারের সঙ্গে আঁতাতেরও।

জামায়াত নেতারা জানান, বর্তমানে জামায়াতের কয়েক ধাপে কর্মসূচি চলমান রয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশের প্রতিটি ইউনিটে ইউনিটে চলছে তাদের এ কর্মসূচি। প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করছে দলটির নেতাকর্মীরা। চলমান কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে জনসংযোগ, তাপপ্রবাহের মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে খাবার পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ, তীব্র দাবদাহ থেকে পরিত্রাণের জন্য সালাতুল ইসতিসকার নামাজ। এসব কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আগের মতো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন না হলেও বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটছে। সেগুলোকে পাত্তা দিচ্ছে না দলটি। দলের নেতাদের দাবি রাজপথে নামলে কিছু প্রতিবন্ধকতা আসবেই। এগুলো মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। তবে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের বিষয়ে তারা মুখ খুলতে নারাজ। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মতিঝিলে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছিল জামায়াতে ইসলামী। দীর্ঘ এই সময়ে আত্মগোপনে থেকে বিভিন্ন দিবসসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। এছাড়া নানা সময়ে নানা ইস্যুতে ঝটিকা মিছিলে সীমাবদ্ধ ছিল জামায়াতের কর্মসূচি। সূত্র জানায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দলটির আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, নায়েবে আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা মুক্তি পেয়েছেন। বিভিন্ন সময় জেলগেট থেকে আটক করা হলেও এবার তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই তারা জেলগেট পার হয়েছেন। রমজানে দীর্ঘ প্রায় ৯ বছর পর প্রকাশ্যে রাজধানীতে ইফতার মাহফিল করেছে দলটি। এছাড়া রমজান মাসে প্রতিদিনই তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বড় বড় কর্মসূচি পালন করেছে।

এদিকে বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছে জামায়াত। এরপর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য সারা দেশে দলটির নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতিও নেয়। জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই অনলাইন ও অফলাইনে এমনকি ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে নির্বাচনের প্রচারণা চালান নেতাকর্মীরা। যদিও শেষ পর্যন্ত বিএনপির অনুরোধে নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। নির্বাচন বর্জন করলেও বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে সরব রয়েছে জামায়াত।

জানা গেছে, গত ১ মার্চ রাজধানীর বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ছাড়া ২ মার্চ জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের স্ত্রীর মৃত্যুতে রাজধানীর ধানমন্ডি ঈদগাহ ময়দানে জানাজার ইমামতি করেন দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান। সেখানেও কেন্দ্রীয় সব নেতা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রমজানে বিএনপির উদ্যোগে রাজনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে জামায়াতের আমিরসহ চার কেন্দ্রীয় নেতা অংশগ্রহণ করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, গোটা জাতি আজ জুলুমের শিকার হয়েছে। রবের কাছে সাহায্য চাই তিনি যাতে আমাদের সাহায্যে করেন। আমরা যেন কোনো জালিমের কাছে মাথা নত না করি। এরপর হোটেল সোনারগাঁওয়ে কূটনীতি, রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্টজনের সম্মানে প্রকাশ্যে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে গত ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরে পুলিশের তিন স্তরের ব্যারিকেট ভেঙে আরামবাগে সমাবেশ করে জামায়াত। ওই সমাবেশে পুলিশের কোনো অনুমতি না থাকলেও যে কোনো মূল্যে সমাবেশ করবে বলে জানায় দলটি এবং শেষ পর্যন্ত সফলভাবে সম্পূর্ণ করে তারা। কিন্তু নিজেদের দোষে ব্যর্থ হয় বিএনপি। এর আগে তিন দফা দাবিতে গত বছরের ১০ জুন ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সমাবেশ করে জামায়াত। গত ১০ বছরের মধ্যে ঢাকায় সেটিই ছিল দলটির প্রকাশ্যে প্রথম সমাবেশ। তখনো সরকার থেকে অনুমতি পাওয়া নিয়ে ছিল বহু গুঞ্জন। এরপর গত ৭ জুলাই সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনার প্রতিবাদে রাজধানীর মিরপুরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। সেই কর্মসূচিতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী যোগ দেন। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরেও জায়গা পায় দলটি।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, বছরব্যাপী আমাদের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি চলমান থাকে। অন্য সব দলের মতো নয়, আমাদের দলীয় অনেক কর্মসূচি থাকে। এত দিন আমাদের কর্মসূচি অনলাইনের মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা করা হতো। এখন আমাদের জনসংযোগ কর্মসূচি চলছে। এছাড়া চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। সারা দেশের প্রতিটি ইউনিটে এ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। যতদিন পর্যন্ত তাপপ্রবাহ থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলমান থাকবে। তিনি বলেন, অনাবৃষ্টি ও তীব্র দাবদাহ থেকে পরিত্রাণের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার রহমত কামনায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহব্যাপী সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে। অনেক জায়গায় বাধা দেয়া হয়েছে, আবার কিছু কিছু স্থান থেকে জামায়াতের নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে অনেক স্থানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। এই প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে।

ওই নেতা বলেন, আগে আমরা অনলাইনে কিছুটা স্লো ছিলাম। কারণ সূত্র ধরে পুলিশ আমাদের সন্ধান করত। কিন্তু এখন দলটির অনলাইন শাখাকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। তারা আমাদের দলীয় নানা ধরনের কর্মকাণ্ড খুব জোরেশোরে অনলাইনে প্রচার করছে। যা দেশের জনগণ ভালোভাবেই নিয়েছে। প্রতিটি ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে। এতে জামায়াতের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তৈরি হচ্ছে সরকারবিরোধী জনমত। দেশ ও বিদেশ থেকেও আমাদের কর্মকাণ্ড শেয়ার দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, প্রচণ্ড গরমের কারণে সারা দেশে সাধারণ মানুষের মাঝে খাবার পানি এবং স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত তাপমাত্রা এরকম থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলমান থাকবে।

হঠাৎ করে প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনে গুরুত্ব দেয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতদিন শুধু ইনডোরে আমাদের কর্ম কিছু হয়েছে তা নয়, বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি প্রকাশ্যে হয়েছে, এখনো হচ্ছে। বেশির ভাগ কর্মসূচি অনলাইনে প্রচারণা হয়েছিল যার কারণে বোঝা যায়নি। প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ইসতিসকার নামাজের বাধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক স্থান থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এতে বোঝা যায় সরকার একটি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। এ জন্য সাধারণ কর্মসূচিতেও বাধা দিচ্ছে গ্রেপ্তার করছে। সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকেও মেনে নিতে পারছে না। জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রচার সম্পাদক ইমন আশরাফ জানান, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি ইউনিটে জামায়াতের জনসংযোগ চলছে। গত ১৯ এপ্রিল শুরু হয়ে আগামী ৪ মে পর্যন্ত চলমান থাকবে। এছাড়া চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ইউনিটে এই কর্মসূচি চলমান রয়েছে। যতদিন পর্যন্ত তাপপ্রবাহ থাকবে ততদিন পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলমান থাকবে। তীব্র দাবদাহ থেকে পরিত্রাণের জন্য মহান আল্লাহতায়ালার রহমত কামনায় কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সপ্তাহব্যাপী সালাতুল ইসতিসকার নামাজ আদায় করা হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী এ কর্মসূচি অনেক জায়গায় শেষ হয়েছে, এছাড়া বিভিন্ন স্থানে এখনো চলমান রয়েছে।

জামায়াতের কর্মকাণ্ড বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে, জামায়াত যেহেতু নিষিদ্ধ কোনো দল নয়; তাই তাদেরও সভা সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। সরকার দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতকে কোনো সভা সমাবেশ করতে দেয়নি, আবার মাঝে মধ্যে দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে কেন এমন আচরণ করছে এটা সরকারই ভালো বলতে পারবে।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ