ঢাকা, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৫ জিলকদ ১৪৪৫

দল গোছাচ্ছে বিএনপি

প্রকাশনার সময়: ১১ মার্চ ২০২৪, ০৭:০৮

সরকারবিরোধী আন্দোলন সামনে রেখে দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটিও।

আজ সোমবার জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলন-২০২৪ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জানা গেছে, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল এবং ঢাকা উত্তর মহিলা দলসহ সব অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।

জাতীয়তাবাদী মহিলা দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলন-২০২৪ আজ সোমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ ভাসানী ভবন মিলনায়তনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রোববার বিকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে পাঠানো এক খুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান। মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।

অতীতে বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে সামনের সারিতে থেকে ভূমিকা রেখেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে ছাত্রদলের হতাশাজনক পারফরম্যান্সে খুবই ক্ষুব্ধ ছিলেন বিএনপির হাইকমান্ড। তাই আন্দোলন শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই ভেঙে দেয়া হলো ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। বিদায়ী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নাসির উদ্দীন নাসিরকে সাধারণ সম্পাদক করে সরাসরি গঠন করা হয়েছে সাত সদস্যের নতুন আংশিক কমিটি। এছাড়া আন্দোলন সংগ্রামের প্রাণকেন্দ্র বলা হয়ে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়কে। সেখানেও কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি ছাত্রদল। তাই আগের কমিটি ভেঙে সেখানেও নতুন কমিটি দেয়া হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের নতুন কমিটির মধ্য দিয়ে দল পুনর্গঠনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিএনপি। এবার জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে দলটি। গত সোমবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানানো হয়নি। জানা গেছে, বৈঠকে আলোচনার শেষ পর্যায়ে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জাতীয় কাউন্সিলের প্রসঙ্গটি সামনে আনেন। তিনি বলেন, যেহেতু অনেক দিন বিএনপির কাউন্সিল হয়নি, এখন কাউন্সিল করা যেতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবা উচিত। তবে চাইলেই তো কাউন্সিল করা যাবে না। এজন্য প্রস্তুতির ব্যাপার রয়েছে। সিদ্ধান্ত হলে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, কাউন্সিল নিয়ে এমন প্রস্তাবনার পর স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এ বিষয়ে কথা বলেন। তবে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে থাকায় বিস্তর আলোচনা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে চলতি সপ্তাহে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে কাউন্সিল নিয়ে মোটামুটি সিদ্ধান্ত হতে পারে। এমনকি কাউন্সিলের তারিখও নির্ধারণ করা হতে পারে।

এদিকে নেতাকর্মীদের চাঙা ও উজ্জীবিত করতে আসন্ন রমজানে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ইফতারপূর্ব আলোচনাসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাংগঠনিক জেলাগুলোর ইফতারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন। দলের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা এখন জেলা নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি সমন্বয় করছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে এবার চারটি ইফতার মাহফিল করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় নির্বাহী কমিটির ষষ্ঠ কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। বিএনপির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, জাতীয় কাউন্সিলে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটি নির্বাচিত হবে। এ কমিটি নির্বাচিত হবে তিন বছরের জন্য। তবে ৯ বছরের মধ্যে একটি কাউন্সিলও হয়নি। যদিও দলটির নেতাদের দাবি, সরকারের দমন-পীড়নের কারণে কাউন্সিল করা যায়নি।

সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, মূল দলের আগে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় দলটি। মূল দলের পুনর্গঠনের মাধ্যমে জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণ করা হবে। স্থায়ী কমিটিতে পাঁচটিসহ কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রায় ১৩০টি পদ এখন শূন্য রয়েছে। তবে অঙ্গ সংগঠন পুনর্গঠনের মধ্যেও এই প্রক্রিয়া চলতে পারে। সম্প্রতি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দুটি শূন্যপদ পূরণ করা হয়েছে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির শূন্য পূরণসহ আসতে পারে বেশ রদবদল।

সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের কিছু দিন পর স্থায়ী ও নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হলেও বেশ কয়েকটি পদ ফাঁকা ছিল। মৃত্যু, পদত্যাগ, বহিষ্কারের কারণেও কিছু পদ ফাঁকা হয়েছে। ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির শুরুতেই দুটি পদ ফাঁকা ছিল। এরপর তরিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, এমকে আনোয়ার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ মারা যান। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান। যদিও তার পদত্যাগপত্র বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ বা প্রত্যাখ্যান কোনোটিই করা হয়নি। অসুস্থ থাকায় ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া স্থায়ী কমিটির বৈঠকসহ কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন না।

২০১৯ সালের জুনে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই হিসাবে এখন সদস্য সংখ্যা ১৪ জন। পাঁচটি পদ শূন্য রয়েছে। ৩৭ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে অন্তত ৯টি পদ ফাঁকা। এ ছাড়া ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির মধ্যেও বেশ কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন। নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যেও কয়েকজন মৃত্যুবরণ করেছেন। কয়েকজনকে বহিষ্কার আর কয়েকজন স্বেচ্ছায়ও পদত্যাগ করেছেন। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির ১৩০টির মতো পদ এখন শূন্য। তা ছাড়া বয়সের কারণেও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয়।

জানা গেছে, চলমান আন্দোলন বেগবান করতে রমজান সাংগঠনিক মাস হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে। বিশেষ করে কেন্দ্র থেকে মাঠ পর্যায়ের কোন্দল নিরসন করে দলকে আরও ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন হতাশা কাটিয়ে পুনরায় মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে নিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মনোবল ধরে রাখতে নিয়মিত কর্মসূচিতে যেতে চায় দলটি। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে ইস্যুতে সরকারবিরোধী কার্যক্রম আরও জোরদার করতে চায় দলটি। আসন্ন রমজান মাস ঘিরে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, দল পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। দলের প্রয়োজনে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের পুনর্গঠন করা হয়। দলের স্বার্থে যে কোনো সময় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে রদবদল আনতে পারে। এখন ছাত্র দল পুনর্গঠন হয়েছে সামনে আরও হবে। বড় একটি আন্দোলন গেছে। টানা বড় কর্মসূচি মানে সংগঠনের ঘাটতি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। এখন যেহেতু সময় সুযোগ রয়েছে সংগঠনগুলো সাজানোর প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে বিএনপি। পুনর্গঠনের মাধ্যমে সংগঠন আরও বেশি শক্তিশালী হয়। এখানে অন্য কোনো কিন্তু নেই।

নয়া শতাব্দী/এসআর

নয়া শতাব্দী ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

এ সম্পর্কিত আরো খবর
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আমার এলাকার সংবাদ