রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক কিশোরীর। তার নাম প্রীতি ওরাং।
দরিদ্র পরিবারে প্রীতির জন্ম। সেজন্য শৈশব থেকেই দেখেছে সংসারের অভাব-অনটন। প্রীতির বাবা-মা চা শ্রমিক। নিরাপদ জীবনের আশায় ১৩ বছর বয়সেই প্রীতিকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকা পাঠিয়ে দেন তারা। সেই আশাই যেন কাল হলো তাদের। মায়ের বুকে আর ফেরা হয়নি প্রীতির। ফিরেছে তার নিথর দেহ। মেয়ের এই অস্বাভাবিক মৃত্যুশোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। কোনোভাবেই থামছে না তার আর্তনাদ।
মোহাম্মদপুরের শাজাহান রোডের এক বহুতল বাড়ির নিচে গত ৬ ফেব্রুয়ারি সকালে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল গৃহকর্মী প্রীতি। এ অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আগেই প্রীতির মৃত্যু হয়েছে। ওই ভবনের নবমতলায় থাকেন ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক।
পরে প্রীতির মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়ে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন। পুলিশ সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে প্রীতির মরদেহ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিতিঙ্গা চা-বাগানে, প্রীতির নিজ বাড়িতে পাঠানো হয়। এতে শোকের ছায়া নেমে আসে চারপাশে। প্রীতির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না কেউ।
প্রীতির শেষকৃত্য হয়েছে তিন দিন পেরিয়ে গেছে। অথচ পুরো চা-বাগান এলাকায় এখনো শোকের আবহ। প্রীতির বাবা চা শ্রমিক লুকেশ ওরাং বলেন, মৌলভীবাজারের স্থানীয় সাংবাদিক মিন্টুর ওপর আস্থা রেখে মেয়েকে ঢাকায় দিয়েছিলাম। তখন তারা বলেছিল, সেখানে আমার মেয়ে ভালো খাবে, সুখে থাকবে এবং বাসায় বাচ্চাদের সঙ্গে খেলাধুলা করবে। মাসে মাসে টাকাও দেবে। কিন্তু আমার মেয়েটি লাশ হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়ি ফিরল। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।
লুকেশ বলেন, ঢাকায় যাওয়ার দুই বছরে আমার মেয়েকে একটিবারও দেখতে দেয়নি ওরা। মেয়েকে একটি দিনের জন্যও ছুটি দেয়নি। নানা অজুহাত দেখাতো। মাসে দুই-একবার গৃহকর্তার মোবাইলে ওর মায়ের সঙ্গে কথা বলতে দিত।
প্রীতির মা নওমিতা ওরাং বলেন, আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে যেসব খরচপাতি লাগবে, সব টাকা দিবে বলেছিল ওই সাংবাদিক। মিন্টু সাংবাদিক বলল তোমার মেয়েকে দেও ওই বাসায়, সাংবাদিকের একটি বাচ্চার সঙ্গে খেলাধুলা করবে, ভালো খাইবে। এখন আমার মেয়েকে নিয়ে মেরে ফেলবে, এই কথা তো আমার জানা ছিল না। ওকে নিরাপদ জীবনের আশায় পাঠিয়ে ফেরত পেলাম লাশ।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, প্রীতি ওরাংয়ের মৃত্যু আসলেই দুঃখজনক। প্রীতি যে ঢাকায় ওই সাংবাদিকের বাসায় কাজ করতে গেছে, সেটা বাগানের কেউই জানে না। প্রীতির মা ও বাবার সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিক মিন্টু দেশোয়ারা গোপনে তাকে ঢাকায় পাঠায়। আমি প্রীতি হত্যায় জড়িতদের তদন্তসাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল বলেন, তদন্তে প্রীতি হত্যার প্রকৃত ঘটনা সঠিকভাবে উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।
নয়াশতাব্দী/একে
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ