অবশেষে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। গত বুধবার অনলাইন মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। সূত্র মতে, পদত্যাগপত্রে অসুস্থতাজনিত কারণে ওয়াসার এমডির দায়িত্ব পালন করতে অপারগতার কথা জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকা ওয়াসার ভেতরে-বাইরে থেকে বারবার দাবি উঠলেও সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের নিয়োগ বাতিল হয়নি এতদিন। উল্টো দফায় দফায় তার চাকরির মেয়াদ বেড়েছে। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বাতিলের কথা জানানো হলেও এর একদিন আগে তাকসিম এ খান মন্ত্রণালয় পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তার নিয়োগ বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (ওয়াসা) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের চুক্তি বাতিল করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ওয়াসার বিদায়ী এমডির স্টাফ অফিসার ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী বদরুল আলম জানিয়েছেন, তাকসিম এ খান পদত্যাগ করেছেন। গত বুধবার তিনি মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য তিনি দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় মেয়াদ বাড়িয়ে আর পদ ছাড়তে হয়নি তাকসিম এ খানকে। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে জানা যায়। যে কারণে সপ্তমবারের মতো ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পান।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন তাকসিম। এরপর একদিনও নিজের দপ্তরে তাকে দেখা যায়নি। তিনি দেশে আছেন নাকি বিদেশে, সেটিও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
যখন থেকে তাকসিম এ খানের যাত্রা শুরু
২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে প্রথমবারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন তাকসিম এ খান। এরপর দফায় দফায় তার মেয়াদ বাড়তে থাকে। সবশেষ গত বছরের আগস্টে সপ্তমবারের মতো ওই পদে আরো তিন বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি। দুর্নীতি, অনিয়মসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও তাকসিমকে একই পদে দীর্ঘ সময় রাখা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ২০০৯ সালের পর থেকে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ে ১৬ বার। গত ১৫ বছরে ঢাকা ওয়াসায় একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন তাকসিম এ খান। ওয়াসার আইন অনুযায়ী, ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হওয়ার কথা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বোর্ডকে পাশ কাটিয়ে ঢাকা ওয়াসাকে পরিচালনা করেছেন তাকসিম। এ নিয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে। এতে তাকসিমের কিছুই হয়নি। বরং তার অনিয়ম, অপচয় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দেওয়ায় সরে যেতে হয় সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাকে। শুধু তাই নয়, তাকসিম এ খানের আমলে ঢাকা ওয়াসায় বৈদেশিক ঋণের টাকায় বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এর ফলে ঢাকা ওয়াসাকে ঋণের সুদ ও আসলের কিস্তি পরিশোধে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পে ঢাকা ওয়াসার বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি এবং বাস্তবায়নের পর তা চালু করতে না পারার মতো কারণে সংস্থাটির ব্যয় বেড়েছে। এদিকে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিমের সর্বশেষ মাসিক বেতন ছিল ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে দুই লাখ টাকা। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্টধারী তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির বহু অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলমান ও মামলার সুপারিশ রয়েছে। তিনি যে কোনো সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তাকসিমের গ্রেপ্তার-শাস্তির দাবিতে ওয়াসা ভবনে অবস্থান: ঢাকা ওয়াসার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খানের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবিতে ওয়াসা ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছে বিক্ষুব্ধ মানুষ।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে ‘ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলন’ ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়।
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজধানীর জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। এর আগে, ওয়াসার পানি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শরবত খাওয়াতে এসে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন তিনি।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমরা ওয়াসা ভবনে অবস্থান করছি। আজ (গতকাল) বিকাল ৫টা পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’
নয়াশতাব্দী/জিএস
মন্তব্য করুন
আমার এলাকার সংবাদ